মেট্রিক পরীক্ষা দিয়ে হোস্টেল থেকে বাসায় আসছি মাত্র সপ্তাহ পার হইছে। গেষ্ট এর মত থাকি। আমার ব্যাচের অনেক বন্ধুই তখন আশেপাশে পোলাপান পড়ায়।
আম্মু একদিন বল্ল, “সারাদিন তো ঘুমাস আর কম্পিউটার টিপস, তোর ভাইটারে তো একটু পড়াইতে পারস? কত মানুষ কত কিছু করে”। ইত্যাদি হাওকাও এবং দর কষাকষির পর আমাকে মাসিক ১০০০ টাকায় ছোটভাই পড়ানোর জন্য নিয়োগ দেয়া হইল। সপ্তায় ৫/৬ দিন ১ ঘন্টা করে পড়ানোর চুক্তি।
তো, ছোটভাই জাওয়াদ তখন ক্লাস ওয়ান বা কেজির ছাত্র। ১ম দিন তাকে স্কুলের দেয়া হোমওয়ার্ক গুলো কমপ্লিট করতে দিলাম, ১ লাইন লেখা আছে, দেখে দেখে আরো ৭/৮ লাইন লিখতে হবে। পেন্সিল দিয়া একটু লিখে আর রাবার দিয়া মুছে। প্রতি মিনিটে পেন্সিল অথবা রাবার টেবিল থেকে নিচে পরে যায় আর সেগুলো তুলতেও সময় লাগে অনেক।
১ ঘন্টায় তার এক সাবজেক্ট এর ১ পাতা হাতের লেখাও কমপ্লিট হলো না। বিরাট মেজাজ খারাপ হয়ে গেল এবং বেদম মাইর দিলাম। ছোট ভাই ভ্যা ভ্যা করতে করতে সেদিনের মত আমার রুম থেকে বিদায় নিল।
মিনিট পাঁচেক পর আম্মু আসলেন আমার রুমে, হাতে ৫০০ টাকার ২টা কচকচা নোট। আমি দেখেও না দেখার ভান করে থাকলাম। আম্মু নোট দু’টো আমার হাতে দিয়ে বল্লেন, ‘নে বাবা, আর পড়াইতে হইব না‘।
যতদূর মনে পরে এটাই ছিল আমার জীবনের প্রথম ও শেষ চাকরি তথা স্বাধীন চাকরি – কারণ এর পর আর আসলে কিছুই করিনি উপার্জনের জন্য। (এখনো পর্যন্ত)। আর ছোট ভাইটাও বড় হচ্ছে। অনেক লক্ষী। আব্বুর ইচ্ছা আমি যেন উনার মত একটি স্বাধীন চাকরি করি। ছোট থেকে এই কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন তিনি। সত্যিকার অর্থে কোনদিন চাকরি করা’ই হয়ে উঠেনি আজো।
–
লাবিব ইত্তিহাদুল