এক বন্ধু ছিল। নাসিব। একই সাথে হাইস্কুল, কলেজ শেষ করেছি। একই এলাকায় থাকতাম তাই যোগাযোগ আড্ডা বেশি হতো। একদিন আড্ডায় বল্লাম তাকে এক টর্চ লাইটের কথা। যেটা আমি গতদিন ২৬০০ টাকা দিয়ে কিনেছি। এক টানা ৬ ঘন্টার বেশি জ্বলে এই টর্চ। সাথে বিল্ট ইন ক্যালকুলেটর আছে এবং ফোন করা যায় এই টর্চ থেকে। সে এতটাই আকৃষ্ট হয়েছিল যে, আড্ডার পর সেই রাতেই আমার বাসায় হাজির। আমিও তাকে খুব সাধারণ ভাবেই নোকিয়ার ২৬০০ টাকা দামের টর্চ লাইট টা হাতে ধরে দেখতে দিয়েছিলাম। সে সত্যি শকড হয়েছিল টর্চ টা দেখে।
সাল টা ২০১০। আমরা একই ভার্সিটি তে ভর্তির জন্য অপেক্ষমান। একই সাথে ভার্সিটি তে গিয়ে সব জেনে শুনে এসেছি। যারা পড়চ্ছে, তাদের সাথে কথা বলেছি। কয়েকদিনের মধ্যেই ভর্তি হব দুজনে। এক সন্ধ্যায় সে আড্ডায় নাই। আমি রাতে হাঁটতাম। হাঁটতে হাঁটতে ওর বাসার সামনে আসতেই দেখি সে আর তার আব্বু ইয়া বড় এক লাগেজ নিয়ে রিক্সা থেকে নামল। আমি আংকেল কে সালাম দিয়ে, নাসিব কে জিজ্ঞাসা করলাম, কিরে? দেশে কি যুদ্ধ লাগছে নাকি? দেশ ছাইড়া পলানোর প্ল্যান করতাছস? এত্ত বড় লাগেজ!…. সে বল্ল, দোস্ত, চিটাগাং যামু, বেড়াইতে। বাসায় ব্যাগ নাই, তাই লাগেজ কিনলাম। বিদায় নিয়ে বাসায় আসলাম। দুপুরে ঘুম থেকে উঠে হাঁটতে হাঁটতে ওর বাসার গেইট এ যেয়ে নাসিব কে ফোন দিলাম। নাম্বার বন্ধ। দারোয়ান মামাকে জিজ্ঞাসা করতেই বল্ল, নাসিব মামা তো আজকে সকালের ফ্লাইট এ আমেরিকা চইলা গেছে, আপনে জানেন না? লজ্জা পেয়েছিলাম। বল্লাম, জানব না ক্যান? ভাবছিলাম বিকালে যাবে।
জানি না কোন লজ্জায় মামাকে বলতে পারি নাই যে, ওর আমেরিকা যাওয়ার কথা আমি একেবারেই জানতাম না। পরে অনেকেই জিজ্ঞাসা করেছে, বলেছি জানতাম। তবে এটা সত্যি, জানলেও আটকে রাখতাম না বা আমাকে নিয়ে যাবার বায়না ধরতাম না। এভাবে শকড হব বুঝিনি।
–
লাবিব ইত্তিহাদুল
১০ অক্টোবর, ২০১৪